ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় হাত বাড়ালেই মেলে ইয়াবা গাঁজা মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখে মাদক ব্যবসায়ী, পাচারাকারী আটক ও মাদক জব্দ করলেও ওপেন সিক্রেট মাদক বিকিকিনি চলছেই। স্থানীয়ভাবে তৈরি চোলাই মদ ছাড়াও গাঁজা, আফিম, পেনসিডিলি, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বেচাকেনা হচ্ছে উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে। পাশাপাশি চকরিয়া এখন ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট রোডে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজ মাদকসেবন ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি শংকিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। কতিপয় ব্যক্তিও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অদৃশ্য আয়ে হচ্ছেন ‘আঙ্গুল ফুলে বটগাছ’।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন মার্কেট ভিত্তিক পয়েন্টে মাদক ব্যবসা নিয়ে তরুণ যুবকদের কয়েকটি সিন্ডিকেট প্রায়শই বাকবিত-া, হাতাহাতি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসার আগেই সরে পড়ে তারা। প্রত্যক্ষদর্শী কেউ ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে পুলিশের কাছে মুখ খোলেনা। তাই এসব মাদক কারবারীদের নামও রয়ে যায় অজানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর, হারবাং, আজিজনগর, পৌরসভার কোচপাড়া ও বিনামারায় প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ। এই মদ বাইরে পাচার ছাড়াও চকরিয়ার পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ এলাকার কতিপয় ব্যক্তি পাইকারীতে ক্রয় করে খুচরা মূল্যে বাজারজাত করছে। দেশীয় এই মদের পাশাপাশি পার্বত্য জেলা বান্দরবান, কুমিল্লা ও ফেনি থেকে গাঁজা এনে বিক্রয় করছে অনেকেই। টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজারের একাধিক সিন্ডিকেটের সাথে আঁতাত করে চকরিয়ার কতিপয় ‘পরিচ্ছন্ন’ ব্যক্তিখ্যাত লোকজন ছাড়াও বেশ ক’জন তরুণ/যুবক ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। তারা চকরিয়ায় মাদকসেবীদের চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের শহুরে এলাকায় পাচার করছে ইয়াবা। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের অনৈতিক ব্যবসার পাশাপাশি তাদের সহায়তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার অসংখ্য লোক নানা কৌশলে ইয়াবা পাচার করছে।
এদিকে, চকরিয়া থানা পুলিশ গোপন সুত্রে খবর পেয়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজা ও চোলাইমদ জব্দ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আটক করে থানায় মাদক আইনে মামলা করেছে। মালুমঘাট ও চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ একমাসেই ১২ দফায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ পাচারকারী আটক করে মামলা করেছে। ইয়াবাসহ আটক হওয়া ব্যক্তিরা বেশির ভাগই কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের
লোক। চোলাই মদ ও গাঁজাসহ আটক হওয়া ব্যক্তিরা স্থানীয়।
স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা আটকের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের সিন্ডিকেট গঠন করে ব্যাপকভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগে প্রকাশ।
সচেতন মহলের মতে, মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে সমাজ থেকে নির্মূল হবে না মাদক। উল্টো রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার লোভে মাদক ব্যবসার প্রসার আরো বাড়বে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. কাজী মতিউল ইসলাম বলেন, যেখানেই মাদক সেখানেই পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং নেবে। কোন মাদক পাচার ও ব্যবসায়ীদের ছাড় দেয়া হবে না। মাদক ব্যবসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক কথায় মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরু টলারেন্স দেখাবে। কোন ভাবেই মাদক সংশ্লিষ্টদের ছাড় দেয়া হবে না।

পাঠকের মতামত: